শিফটের ও অনলাইন কাজের শিফটের ধারণা

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-১ - হিউম্যান রিসোর্স পরিকল্পনা | NCTB BOOK

অফিস বা কারখানার দৈনিক মোট কার্য সময়কে একাধিক ভাগে বিভক্ত করে প্রতিটি ভাগের জন্য পৃথক কর্মী দিয়ে কাজ করা হলে এর একেকটি ভাগকে শিফট বলা হয়। সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই দৈনিক আট ঘণ্টা বা তার চেয়ে কিছু বেশি। সময় খোলা থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজে একজন কর্মীই অফিসের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যথেষ্ট। তবে প্রতিষ্ঠানটি যদি ১২ ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় খোলা থাকে, তবে একটি কাজের জন্য একজন কর্মীই যথেষ্ট নয় এবং তা আইনসম্মতও নয়। এক্ষেত্রে সময় ভাগ করে দুজন কর্মীকে নিয়োজিত করতে হবে। 

চিত্র : শিফট

এভাবে সময় ভাগ করে পৃথকভাবে কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টিকে কার্যক্ষেত্রে শিফট বলে আখ্যায়িত করা হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে কাজ করার লোক বা সেবাপ্রার্থী বেশি থাকে। সেই তুলনায় কাজ করার জায়গা বা সেবা দেওয়ার লোক কম থাকে। এরূপ ক্ষেত্রে কাজ করার লোক বা সেবা প্রার্থীদেরকে একাধিক গ্রুপে ভাগ করে একেক গ্রুপকে একেক সময় কাজের সুযোগ দেওয়া হয় কিংবা সেবা প্রার্থীদেরকে সেবা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে পোশাক তৈরির কারখানায় এভাবে শিফটের ভিত্তিতে কাজ করা হয় এবং শহর এলাকার অনেক স্কুলে একাধিক শিফটে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

কিছু কাজ আছে যা কর্মীকে সশরীরে কর্মক্ষেত্রে এসে করতে হয়। আবার কিছু কাজ এমন আছে, যা কম্পিউটারভিত্তিক এবং এগুলো যেকোনো জায়গায় বসেই করা যায়। এক্ষেত্রে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হয়। অর্থাৎ, এগুলোকে অনলাইনে করা যায়। অনলাইনের কাজগুলোও সবসময় সব কর্মী একই সময়ে করতে পারে না। তাই কাজগুলোকে সময়ভিত্তিক ভাগ করে কর্মী ভাগ করে দিতে হয়। একে অনলাইন কাজের শিফট বলা যায়।

প্রতিষ্ঠানের ডেটা এন্ট্রির কাজ বা কম্পিউটারে কম্পোজের কাজ অনলাইনে করতে চাইলে যেকোনো সংখ্যক লোক বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করেও একই সময়ে করতে পারে। কিন্তু অনলাইনে মনিটরিং, অনলাইনে মজুদ ব্যবস্থাপনা, অনলাইনে টিকেটিং প্রভৃতি কাজ এভাবে সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মী বা অপারেটরকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এজন্য ২৪ ঘণ্টা বা পুরো অফিস টাইমকে সুবিধামতো ভাগ করে একেক ভাগের জন্য পৃথক কর্মী বা কর্মীদল নির্ধারণ করতে হয়। একে অনলাইন কাজের শিফট বলা যায় । তাই বলা যায়, কাজের সময়কে একাধিক ভাগে ভাগ করে পৃথক কর্মীদের দিয়ে একেক সময়ের কাজ করানোর কৌশল হলো শিফট। আর অনলাইনে করা যায় এরূপ কাজের ক্ষেত্রে পৃথকভাবে সময় ও কর্মী বরাদ্দ দিয়ে কাজ করানোর কৌশলকে অনলাইন কাজের শিফট বলা হয়।

🔳 কাজ ও শিফট অনুযায়ী দক্ষতা নির্ধারণ পদ্ধতি (Determining Skills for Job and Shift)

প্রাতিষ্ঠানিক কাজ একজন কর্মীর স্বাভাবিক কর্মঘণ্টার চেয়ে অনেক বেশি সময় চলমান রাখতে হলে একজনের পর অন্য জনকে কাজে নিয়োজিত থাকতে হয়। এভাবে সময় বিভক্ত করে একাধিক ব্যক্তির কাজের সুযোগ তৈরির কৌশলই হলো শিফট। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ইউনিট একাধিক শিফটে পরিচালনা করতে হলে উক্ত ইউনিটের কাজের ধরন অনুযায়ী দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীকে দায়িত্ব দিতে হয়। এজন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় তা নিচে বর্ণনা করা হলো- 

চিত্র : কর্মীর কার্য সময়ের ব্যপ্তি

১. কাজ চিহ্নিতকরণ (Identifying the job) : কোন কাজ শিফটের ভিত্তিতে করা হবে তা ঠিক করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব কাজ শিফটের ভিত্তিতে করার প্রয়োজন হয় না। আবার যে কাজ শিফটের ভিত্তিতে করতে হবে তাও সারাবছর শিফটের ভিত্তিতে করতে নাও হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক প্রথমে কাজ বা কাজের ইউনিট নির্ধারণ করতে হবে।

২. কার্য বিশ্লেষণ (Job analysis) : শিফটের জন্য নির্ধারিত/বাছাইকৃত ইউনিটের কাজের যাবতীয় বিষয় বিশ্লেষণ করতে হবে। অর্থাৎ উক্ত ইউনিটের কাজের ধরন, কোন ধরনের দক্ষতা সম্পন্ন কর্মী প্রয়োজন প্রভৃতি বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে।

৩. কার্য সময়ের ব্যপ্তি নির্ধারণ : (Determining the working hour) : শিফটের জন্য নির্ধারিত ইউনিটের কাজ কত সময়ব্যাপী চলমান রাখতে হবে তা ঠিক করতে হবে। যদি আট ঘণ্টায় কাজ শেষ হয়ে যায় তাহলে অতিরিক্ত শিফট চালু করার প্রয়োজন হয় না। যদি ১০/১২ ঘণ্টাব্যাপী কাজ চালু রাখতে হয় তবুও অতিরিক্ত শিফট চালু করা জরুরি নয়। এক্ষেত্রে কর্মীদেরকে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ওভারটাইম (Overtime) কাজ করানোর চিন্তা করা যেতে পারে। কার্য সময় আরও বেশি হলে শিফট বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়ে। এজন্য কত ঘণ্টা ইউনিটের কাজ করতে হবে তা আগে ঠিক করতে হবে।

৪. কাঙ্ক্ষিত মানের কর্মীর সংখ্যা যাচাই (Verifying the number of employees of the desired quality): শিফটের প্রয়োজন হলেই তা বাড়ানো যায় না। এজন্য প্রয়োজন কাঙ্ক্ষিত মানের কর্মী। তাই বর্ধিত শিফটের জন্য যে মানের কর্মী যত সংখ্যক লাগবে তা প্রতিষ্ঠানে আছে কিনা বা নিয়োগ দেওয়া যাবে কিনা তা যাচাই করতে হবে।

৫. কার্যসময় বিভক্তিকরণ (Dividing the job time): কাঙ্ক্ষিত মোট কর্মঘণ্টাকে এ পর্যায়ে বিভক্ত করতে হবে। অর্থাৎ শিফট কয়টি করতে হবে, কতঘন্টা করে এক শিফট কাজ করবে, সব শিফটের সময় একই রকম হবে কিনা এগুলোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাজটি বেশ সহজ। কিন্তু সেবা ও সরবরাহমূলক কাজে বিষয়টি বেশ জটিল। এজন্য পিক (Peak) আওয়ার, অফ পিক আওয়ার, প্রতিযোগীদের ও সহযোগীদের অবস্থা প্রভৃতি বিবেচনায় নিতে হবে।

৬. কর্মী বরাদ্দ (Assigning employee) : এ পর্যায়ে কাজের জন্য নির্ধারিত মানের ও যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মীদের ইউনিটসমূহে বণ্টন করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে কর্মীর সংখ্যা ও কাজের পদ বিবেচনায় নিতে হবে। অর্থাৎ কোথাও একজনমাত্র কর্মীকে দায়িত্বে না রাখা বরং গ্রুপে কাজ দেওয়া, সহায়ক কর্মীর ব্যবস্থা রাখা, একজনকে সবসময় একই শিফটে না রাখা প্রভৃতি ।

৭. দায়িত্ব অর্পণ (Assigining responsibility) : এ পর্যায়ে বণ্টনকৃত বা বিভিন্ন ইউনিটের কর্মীদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ ইউনিটে কার কী করণীয়, কার কী ক্ষমতা তা তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে। দায়িত্ব সুস্পষ্ট না থাকলে জবাবদিহিতা নেওয়া যায় না। এজন্য প্রত্যেক শিফটের জন্য বরাদ্দকৃত কর্মীদের কাজ ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে।

সুতরাং, বেশি সময় কোনো ইউনিট চালু রাখতে হলে অতিরিক্ত শিফট চালু করতে হয়। এই শিফট চালাতে লাগে দক্ষতা সম্পন্ন কর্মী। আর উপরিউক্ত পদ্ধতিতে দক্ষতা নির্ধারণ করা যায়।

🔳 শিডিউলিং সফটওয়্যার/ম্যাট্রিক্স ব্যবহার পদ্ধতি (Techniques to use the Scheduling Software / Matrix)

প্রতিষ্ঠানের কোনো ইউনিটের একই পর্যায়ের কর্মীদের সাপ্তাহিক বা মাসিক কাজের রুটিনকে শিডিউলিং ম্যাট্রিক্স বলা হয়। এর একদিকে কর্মীর নাম, আইডি নম্বর প্রভৃতি তথ্য উল্লেখ থাকে। অন্যদিকে তারিখ বা সময় উল্লেখ থাকে। এটি ছোট প্রতিষ্ঠানে বা অল্পসংখ্যক কর্মী থাকলে সাদা কাগজে হাতে লিখে করা যেতে পারে। এটিকে শিডিউলিং ম্যাট্রিক্স বলে। বেশি কর্মী যেখানে কাজ করে বা যেখানে সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় সেখানে কম্পিউটারের এক্সেল (Excel) প্রোগ্রাম বা অন্য কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। একে শিডিউলিং সফটওয়্যার বলা হয়। এরূপ সফটওয়্যার বা ম্যাট্রিক্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হয় তা হলো-

→ কর্মীর সংখ্যা (Number of employees) : শিডিউলিং সফটওয়্যার তৈরি ও ব্যবহারের শুরুতেই ইউনিট বা প্রতিষ্ঠানের মোট কর্মীর সংখ্যা জানতে হবে। কোন মান/পদের কতজন কর্মী কাজে নিয়োজিত আছে তা নির্দিষ্টভাবে জানতে হবে।

→ কর্ম ঘণ্টা (Working hour) : কর্মীদের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক কর্মঘন্টার সীমা দেশে প্রচলিত শিল্প আইন, কারখানা আইন, শ্রম আইন প্রভৃতিতে উল্লেখ আছে। এসব আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক নীতির আলোকে একজন কর্মীর দৈনিক ও সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা কত হবে তা নিশ্চিতভাবে জানতে হবে।

→ কর্ম দিবস (Working day) : কোনো প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে ৫ দিন কার্য দিবস থাকে, আবার কোনো প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে ৬ দিন কর্ম দিবস থাকে। আবার একই প্রতিষ্ঠানে কোনো ইউনিটে ৫ দিন, কোনো ইউনিটে ৬ দিন কার্য দিবস থাকতে পারে। শিডিডিলিং সফটওয়্যার তৈরির আগে এ ব্যাপারে তথ্য নিতে হবে।

→ সাপ্তাহিক ছুটি (Weekly holyday ) : সপ্তাহে ছুটি কোন দিন তা খেয়াল করতে হবে। আর পুরো প্রতিষ্ঠানে একই দিনে ছুটি নাকি একেক ইউনিট একেক দিন ছুটি থাকাবে তাও নিশ্চিত হতে হবে। আবার ইউনিটের অভ্যন্তরীণ কোনো উপদল থাকলে (বিশেষত নিরাপত্তা কর্মীদের ক্ষেত্রে) তাদের সপ্তাহের গণনা কীভাবে হবে তা পূর্বেই নির্ধারণ করে নিতে হবে।

→ দৈনিক শিফটের সংখ্যা (Shift in everyday) : দিনে কয়টি শিফটে কাজ চলবে তা বিবেচনায় নিতে হবে। একাধিক শিফটে কাজ চললে খেয়াল রাখতে হবে যে একজন কর্মী সবসময় একই শিফটে যেন দায়িত্ব না পায়। একেক সময়/সপ্তাহে মাসে একেক শিফটে দায়িত্ব দিতে হবে।

→ মেশিন/পদের সংখ্যা (Number of machine/post) : অপারেটিং পর্যায়ে খেয়াল রাখতে হবে কয়টি মেশিনে কাজ চলে । আর ডেস্ক জবের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে পদের সংখ্যা কতটি। একাধিক শিফট হলে মেশিন বা পদের সংখ্যা অনুযায়ী কর্মী বরাদ্দ করতে হবে।

→ পিক এবং অফ পিক আওয়ার (Peak hour and off peak hour): সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের শিফটিং সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতাদের আগমনের সময় বিবেচনায় নিতে হবে। অর্থাৎ, কখন সেবাগ্রহীতার সংখ্যা কম থাকে আর কখন বেশি থাকে তা বিবেচনায় নিয়ে শিডিউলিং ম্যাট্রিক্স তৈরি তথা কর্মীর সংখ্যা বরাদ্দ করতে হবে।

→ বিরতি (Interval) : ঘণ্টা ভিত্তিক কার্যসময় বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনো কর্মীর যেন পরপর অনেক ঘণ্টা দায়িত্ব না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কয়েক ঘণ্টা পর যেন বিরতি থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে।

→ উদ্বৃত্ত কর্মী (Surplus employee) : প্রতি শিফটেই যেন এক বা একাধিক কর্মী উদ্বৃত্ত থাকে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। অর্থাৎ যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা বা হঠাৎ কেউ অনুপস্থিত থাকলে বা অক্ষম হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার মতো কর্মী হাতে অতিরিক্ত রাখতে হবে।

→ অভিজ্ঞতা বিবেচনা (Considering efficiency) : প্রতি শিফটেই অধিক ও কম দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী মিলিয়ে দায়িত্ব বণ্টন করতে হবে। সব দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীরা যেন এক সময়ে দায়িত্বে না পড়ে তা বিবেচনায় রাখতে হবে।

তাই বলা যায়, প্রতিষ্ঠানের কাজ পরিচালনায় শিডিউলিং সফটওয়্যার বা ম্যাট্রিক্স ব্যবহার অতি দরকারি বা জরুরি বিষয়। আর এক্ষেত্রে উপরিউক্ত পদ্ধতি ও নির্দেশনা মেনে চলতে হয়।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion